এভারেস্ট জয়ের রোমাঞ্চকর কিছু কাহিনী
পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো পর্বতশৃঙ্গের নাম হলো মাউন্ট এভারেস্ট, যার উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার। এই পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় পোঁছানো অনেকেরই স্বপ্ন থাকে। কিছু বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের জন্য তা হয়ে উঠে না।
আপনি এটা জেনে অবাক হবেন যে মাউন্ট এভারেস্টে যাত্রাকালীন গড়ে প্রতি ১০ জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যু ঘটে। এটা অনেকটা কঠিন কাজ হলেও অনেক পর্বত আরোহী ই এভারেস্ট জয় করতে সফল হয়েছে। এবং আশা করা যায় ভবিষতেও করবে। তো চলুন জেনে নেওয়া কে কখন কিভাবে প্রথম এভারেস্ট জয় করেছিল? এভারেস্ট জয়ের রোমাঞ্চকর কিছু কাহিনী নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদনটি।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে উঠার স্বপ্ন সেই ১৯২০ সাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সেই পর্বতশৃঙ্গে উঠতে কেউই সফল হচ্ছিলো না। কারণ আমরা জানি যে এভারেস্টে উঠা খুব একটা সহজ বেপার নয়। সেখানে পৌঁছানোর জন্য অনেক জটিল এবং ভয়ঙ্কর জায়গার সমুক্ষিন হতে হয়। কারণ এই পর্বতের রাস্তায় প্রতি পদে পদে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। আর এই মিশনে আজ অব্দি অনেক লোক পরাজিত হয়েছে আবার অনেক লোককে জীবনও ত্যাগ করতে হয়েছে। এই পর্বত মালাতেই অনেক মানুষের মৃত দেহ বরফের নিচে চাপা পরে রয়েছে, যা আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
কিন্তু এতো প্রতিকূল পরিবেশ থাকার ফলেও কিছু সাহসী লোক হার মানে নি। তারা অনবরত এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। আর সেই সব সাহসী লোকদের মধ্যে একজন ছিলো নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে। তেনজিং নোরগে ই প্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার কৃতিত্ব অর্জন করে ছিল। তো জেনে নেওয়া যাক ওর এভারেস্ট জয়ের সফলতার কাহিনী।
১৯৫২ সালে নেপালের বাসিন্দা তেনজিং নরগের ইচ্ছে হয়েছিল মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার। তাই সে আরেকজন পর্বত আরোহী সুইজারল্যান্ডের রেমেন ল্যাম্বার্ড এর সাথে এভারেস্টে চড়ার ঝুঁকি নিয়ে নেয়। কিন্তু তেনজিং সেই ব্যর্থ হয়। ১৯৫২ সালে শেরপা তেনজিং এবং রেমেন ল্যাম্বার্ড এভারেস্টের শৃঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো। কিন্তু খুব বাজে আবহওয়ার জন্য তাদেরকে সেখান থেকেই ফিরে চলে আসতে হয়। মাউন্ট এভারেস্টের এতো কাছাকাছি গিয়েও ওদের ফিরে আসার দুঃখটা রেমেন ভুলে গেলেও তেনজিং কিছুতেই পারছে না। তেনজিং আবার পরের বৎসর মানে ১৯৫৩ সালে সাত জন ইংরেজ এবং দুই জন সুইজারল্যান্ড এর পর্বতারোহীদের নিয়ে এভারেস্ট জয়ের যাত্রায় বেরিয়ে পরে। তেনজিং, এডমিন হেনরি এবং তাদের টিমকে নিয়ে তারা ৯ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে। বরফের রাস্তা, মাইনাস তাপমাত্রা, হিমনদী, বরফের টুকরো ইত্যাদি বাধা বিপত্তিকে পেরিয়ে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে যাচ্ছিলো। এবং সময়ের সাথে সাথে তারা নিজেদের উদ্দশের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রায় ২০০০০ ফুট উঁচুতে উঠার পর একটি ছোট্ট বরফের খাদকে অতিক্রম করার জন্য হেনরি লাফ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ওর শরীরের ভারের কারণে সেখান থেকে কিছু বরফ খসে পরে। সেই মুহর্তে হেনরি বরফের নিচে চাপা পরে নিজের প্রাণ হারাতে বসেন বসে ছিল। সেই সোম পেছন থেকে তেনজিং তাকে দড়ি ছুড়ে দেয়। সেই জন্য হেনরি কোনো রকম প্রাণে বেঁচে যায়। এরপরই তেনজিং এবং হেনরি রা এভারেস্টের চূড়ার কাছাকাছি চলে আসতে থাকে।
কিন্তু তেনজিংয়ের আগে পর্বত আরোহনের যাত্রা শুরু করে ছিল চার্লস ওয়ার্নের দল। যারা তেনজিংয়ের টিমের অনেক আগেই এভারেস্টের চূড়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে ছিল। অর্থাৎ কোনো কারণে ওয়ার্নের টীম এভারেস্টের যাত্রায় ব্যর্থ হলে বা পর্বত আরোহন বন্ধ করে যদি ফিরে আসে তাহলেই তেনজিংয়ের টিম এভারেস্টের চূড়ার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। তেনজিং এবং হেনরির টিম প্রায় অনেকটাই আরোহন করে ফেলেছিলো কিন্তু এভারেস্টের কাছের শেষ খাঁদ গুলি অত্যন্ত কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আর সেই খাঁদ গুলি পার করতে গিয়ে অনেক পর্বত আরোহীরা নিজেদের জীবন ত্যাগ করেছেন। ঠিক সেই জায়গায় ১৯৫৩ সালের ২৬শে মে মাউন্ট এভারেস্টের শিখরের কাছ থেকে ওয়ার্নের টীম ৩০০ ফুট দূরে ছিল। কিন্তু ওয়ার্ন এবং তার সঙ্গীরা খুবই ক্লান্ত ছিল। তাদের শরীরে আর চলার মতো শক্তিও ছিল না। তাই তাদেরকে শৃঙ্গ থেকে মাত্র ৩০০ ফুট দূরে থেকেই ফিরে আসতে হলো।
ইতিহাস হয়তোবা অন্য কারোর নাম লিখতে আগ্রহী ছিল। ওয়ার্নের টীম ফিরে আসার পরই তেনজিং এবং হেনরির টীম আগে চলে যায়। এবং তারা একটি রাত সেই স্থানে পার করার পরই তারা পরের দিন সকালে নিজেদের যাত্রার উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। তখন সেখানে তাপমাত্রা -২৭ ডিগ্রি ছিল, পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল ছিল তবুও এই সাহসী বীরেরা হাল ছারে নি। তারা সমস্ত পরিস্থিতি এবং নিজেদের শরীরের কঠিনতা পার করে একের পর এক বাধা অতিক্রম করতে থাকে। এই ভাবেই তারা সকাল ৯টার সময় দক্ষিণ শিখড়ে পৌঁছে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের অক্সিজেন কমতে থাকে এবং তখন তাদের কাছে আর পর্যাপ্ত কোনো অক্সিজেনও ছিল না। যে তারা পর্বতের পুরো অভিযান সম্পূর্ণ করতে পারবে বা তারা সেইখান থেকে ফিরে আসতে পারবে। সেই সময় তারা নিজেদের মৃত্যুকে ঠিক যেন সামনেই দেখ ছিলো। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই তেনজিংয়ের গতি কমতে থাকে আর তার পাঁ আস্তে আস্তে ভারী হতে শুরু করে। ঠিক একই রকম অবস্থা হেনরিরও হচ্ছিলো। তখন হেনরি, তেনজিংয়ের দিকে কিছুক্ষন তাকায় এবং তেনজিং কে বিশ্রামের জন্য থামতে বলে। সেই কিছুক্ষন সময়ে হেনরি তেনজিংয়ের অক্সিজেনের নলকে পরিষ্ককার করে কারণ তেনজিংয়ের শ্বাস নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছিলো। তারপর তারা তাদের মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্ত কঠিন পরিস্থিতিকে পিছনে ফেলে আস্তে আস্তে এভারেস্টের চূড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো।
এই ভাবেই শেষ পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের ২৯শে মে সকাল ১১ তার সময় তেনজিংয়ের পাঁ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থান এভারেস্টের চূড়ায় রেখেছিলো এবং নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেই দিন ইতিহাসের পাতায় তেনজিং এবং হেনরির নাম লেখা হয়েছিল। সেই সময় তাদের আনন্দের কোনো সীমা ই ছিল না। তাদের মাথায় অতীতের কোনো কষ্ট এবং সামনের পরিশ্রমের কোনো চিন্তাই ছিলো না। কারণ সেই সময় তারা দুইজনেই যেন অন্য পৃথিবীতে ভেসে গিয়েছিলো। কারণ পৃথিবীর সব থেকে উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে দেখার দৃশ্য তারায় সর্বপ্রথম দেখেছিলো। কিন্তু একটাসময় তাদের অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছিলো। সেই সময় ওরা যদি থেমে যেত তাহলে ওদের আর ইতিহাস লেখা হতো না। তাই মনের জোরটাই আসল। মনের জোর থাকলে সমস্ত অসম্ভবকে যে সম্ভব করা যায় সেটা তেনজিং এবং হেনরি দেখিয়ে দিয়েছে।
এই ছিল মাউন্ট এভারেস্ট নিয়ে কিছু কথা। প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
0 Comments