মালদ্বীপের সরকারী নাম ‘রিপাবলিক অফ মালদ্বীপ’।
এটি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপদেশ।
দেশটি শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং এশিয়া মহাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১০০০ কিলোমিটার।
দেশটিতে দ্বীপ আছে এক হাজার ২০০ কিন্তু মানুষ থাকে মাত্র কয়েকটিতে।
পর্যটকদের জন্য মালদ্বীপ রীতিমতো স্বর্গরাজ্য।
দেশটির অর্থনীতিও পর্যটনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।
মাছও তাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
পর্যটকরা রাজধানী মালে বাদে জনবসতি রয়েছে এমন দ্বীপগুলোতে অল্প সময়ের জন্য যাওয়ার অনুমতি পান।
বহু মালদ্বীপবাসী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করলেও সম্প্রতি দেশটি অবকাঠামো, শিল্প ও মৎস্যসম্পদ খাতে উন্নতি করেছে।
স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতেও তাদের যথেষ্ঠ উন্নতি হয়েছে।
তাহলে বন্ধুরা চলুন,
মালদ্বীপ দেশ সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১. ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় মালদ্বীপে প্রথম বসতি স্থাপনকারীরা ছিলেন দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর লোক। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০-৩৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এরা ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের কেরালা রাজ্য থেকে সেখানে যায়। বারো শতকে এ দ্বীপপুঞ্জে পারসিক মুসলমানদের আগমন ঘটে। তারা ‘বিদেশী সাধু’ বলে পরিচিত ছিলেন। এই বিদেশী সাধু বা পারসিকরা মালদ্বীপবাসীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন।
১১৫৩ সালে পারসিক মুসলমানরা এখানে ‘স্বাধীন ইসলামি সালতানাত’ প্রতিষ্ঠা করেন। তারা সুলতান নাম ধারণ করে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত এই সালতানাতব্যবস্থা কায়েম রাখেন। মাঝে ১৮৮৭ সাল থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত দেশটি ব্রিটিশদের আশ্রিত রাজ্য হিসেবে ছিল। ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই এ দ্বীপরাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়ে যায়। ১৯৬৮ সাল থেকে দেশটিতে প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম আছে। বর্তমানে এটি রাষ্ট্রপতিশাসিত একটি দেশ।
২. ২৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৩ লাখ ৪১ হাজার মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের নবম ক্ষুদ্রতম দেশ।
৩. ধিবেহী ভাষা বা মালদ্বীপীয় ভাষা মালদ্বীপের সরকারি ভাষা। এই দ্বীপগুলির প্রায় সবাই ধিবেহী ভাষার বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলেন। এছাড়াও এখানে সিংহলি ভাষা, আরবি ভাষা এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার প্রচলন আছে। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।
৪. দেশটির সিংহভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। দেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। বাকি ১ শতাংশ অন্যান্য ধর্মের।
৫. মালে হল মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ও সর্বাধিক জনবহুল শহর। শহরটির আয়তন ৯.২৭ বর্গ কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর অন্যতম সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রশাসনিকভাবে শহরটিতে একটি কেন্দ্রীয় দ্বীপ, একটি বিমানবন্দর এবং মালে সিটি কাউন্সিল পরিচালিত আরোও দুটি দ্বীপ রয়েছে। মালের দ্বীপগুলি প্রতিটি একে অপরের সাথে পাকা রাস্তার নিবিড় সংযোগের মাধ্যমে যুক্ত।
কেন্দ্রীয় দ্বীপটিতে ব্যাপকভাবে নগরায়ন করা হয়েছে। মালেতে বহু পর্যটন কেন্দ্র এবং আশেপাশে অনেক রিসোর্ট রয়েছে। মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় বন্দরটি এই শহরেই অবস্থিত। যা দেশটির সমস্ত বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল।
৬. দেশটিতে আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। এপ্রিল থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত মালদ্বীপে আর্দ্র মৌসুম এবং ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুকনা মৌসুম দেখা যায়। এখানে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে।
৭. দেশটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকারপ্রধান। প্রেসিডেন্টই ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন এবং তিনি হচ্ছেন তাদের প্রধান। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তবে দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই।
৮. ক্ষুদ্র হলেও দেশটিতে আছে নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দ্য মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স নামে তাদের একটি নিজস্ব যৌথ প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে। এই বাহিনীর মূল কাজ হলো দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা।
৯. অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এ দেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র দুই দশমিক তিন মিটার এবং গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচ মিটার।
১০. মালদ্বীপের খাদ্যাভ্যাস প্রণালী মুলত মাছকেন্দ্রিক, কেননা মৎস্য শিল্প মালদ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প। প্রতিদিনের খাবার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মাছ ও ভাত, খাদ্য তালিকায় মাছ প্রোটিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পর্যটকদের রিসোর্টসমূহে পরিবেশিত অধিকাংশ খাবারই আমদানীকৃত হয়ে থাকে।
১১. এইবার মালদ্বীপ ভ্রমন সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেই চলুনঃ
মালদ্বীপ এ on arrival visa, সুতরাং ভিসা নিয়ে টেনশন করার কোন দরকার নেই। নিজের কোন কাগজপত্র লাগবে না। লাগবে শুধুমাত্র তিনটি জিনিসঃ-
১। নিজের পাসপোর্ট, ডলার এন্ডোর্সমেন্ট সহ। অবশ্যই মিনিমাম ৬ মাসের ভ্যালিডিটি থাকতে হবে।
২। হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র।
৩। সবশেষে রিটার্ন টিকেট।
এবার আসি, হোটেল বুকিং এর কাগজপত্র কিভাবে ম্যানেজ করবেন? booking.com এ গিয়ে সার্চ দিলেই হবে, যেই হোটেলে বা রিসোর্টে থাকতে চান ঐটাতে বুকিং দিয়ে বুকিং কনফার্মেশনের কাগজ প্রিন্ট করলেই খেলা শেষ।
আরেকটা কথা, on arrival visa এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ডলার এনডোর্স করা যাবে ২০০ ডলার পার পারসন! এটা জাস্ট নিয়ম। সর্বোচ্চ ৫০০০ ডলার নিয়ে যাওয়া যাবে। ঐগুলা কেউ জিজ্ঞেস করবে না। ক্রেডিট কার্ড থাকলে বেশ ভাল।
এবার আসি রিটার্ন টিকেট ম্যানেজ করার বিষয়ে। রিটার্ন টিকেট কাটার আগে কয়দিন থাকবেন আগে থেকে ঠিক করে নিতে হবে। ট্যুর প্ল্যান সেট করে নিন, এর পরে ফেরার দিন ধার্য হলে সেই দিনের রিটার্ন টিকেট কেটে নিন। একটা প্রিন্ট করে নিয়ে নিবেন।
এই তিনটি জিনিস ঠিক থাকলে ইমিগ্রেশনে কোন ঝামেলা হবে না।
১২. প্রাচীনকাল থেকেই সামুদ্রিক মাছ হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তবে বর্তমানে দেশটি পর্যটন শিল্পেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বলা যায়, দেশটির সবচেয়ে বড় শিল্প এখন পর্যটন। মোট আয়ের ২৮ শতাংশ এবং মোট বৈদেশিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে পর্যটন শিল্প থেকে।
১৩. মালদ্বীপের সরকারী মুদ্রা মালদ্বীপীয় রুফিয়া। ১ রুফিয়া সমান প্রায় বাংলাদেশী ৫ টাকা ৪৮ পয়সা এবং ৪.৬৩ ভারতীয় রুপী।
১৪. দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $৫.৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $১৫,৪৬৩ মার্কিন ডলার।
১৫. মালদ্বীপের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৯৬০।
0 Comments