জাপান সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিন (Interesting Facts about Japan)
অনেকে অজানা জিনিস জানতে খুবই ভালোবাসে। আজ আমরা জাপান সম্পর্কে এমন কিছু অবাক করা তথ্য জানবো যা যদি আপনি প্রথম শুনে থাকেন তাহলে অবশ্যই চমকে যাবেন। জাপান পূর্ব এশিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত একটি দেশ। জাপানি ভাষায় জাপান শব্দটিকে নিহন বা নিপুন নামে ডাকা হয়। এক সময় মনে করা হতো সকালে পূর্ব দিকে সূর্য উঠাটাকে জাপান থেকেই সবচেয়ে আগে দেখা যায়। এর জন্য জাপানকে ল্যান্ড অফ দি রাইসিং সান বলা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় ১৩ বছর ক্রিস্টপূর্বে জাপানে জমান নামক মানব সভ্যতার খোঁজ পাওয়া যায়। যাদের আদিম মানুষ বলা হয়। আসলে এরাই জাপানের আদিবাসী বাসিন্দা আইনু দের পূর্বপুরুষ। চীনা ইতিহাস বই বুক অফ হান্ট সর্বপ্রথম, যেখানে জাপানের নাম পাওয়া যায়। সাধারণত জাপানকে একটি দ্বীপের দেশ বলা হয়। দ্বীপের দেশ বলার কারণ জাপান দেশটি প্রায় ৬৮৫২ টি দ্বীপের্ সমন্নয়ে গঠিত। এই দ্বীপ গুলির মধ্যে হোনশু, হক্কাইডো, কিউশু, শিকোকু উল্লেখযোগ্য। জাপানে একটি দ্বীপ আছে যার নাম ওকুনোশিমা, যা পুরোটা খরগোশ দিয়ে ভরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা নিয়ে এসেছিলেন। এই দেশের রাজধানী হলো টোকিও। জাপানের জাতীয় ফুল হলো চেরি ব্লসম। জাপানের আয়তন ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৭২ বর্গকিমি।
জাপানের প্রথম স্বাসকের নাম ছিল জিম্মু তান্নু এবং বর্তমানেও একজন স্বাসক যার নাম আকিহিতো। কিন্তু বর্তমানে জাপান একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত দেশ। দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশকে পরিচালিত করে। জাপান দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের নিকট অবস্থিত হওয়ায় জাপানে খুবই ভূমিকম্প হয়। জাপানের বেশির ভাগ দ্বীপ গুলিই ভূমিকম্প প্রবন এলাকা পেসিফিক রিং অফ ফায়ারে অবস্থিত। পেসিফিক রিং অফ ফায়ার হলো প্রশান্ত মহাসাগরের একটি এলাকা যেখানে ছোট বড়ো অনেক আগ্নেয়গিরি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১০৮ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ১৯২৩, ১৯৯৫ এবং ২০১১ সালের ভূমিকম্পে অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। জাপানে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৫/৬ বার ভূমিকম্প হয়। জাপানের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা ই বসবাসের অযোগ্য। সেখানে রয়েছে ঘন ঘন জঙ্গল, পাহাড় পর্বত তাই দেশের অধিকাংশ জনসংখ্যাকে উপকূলবর্তী এলাকায় দেখা যায়। জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন বসতির দেশ গুলির একটি। যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৩৩৬ জন মানুষ বসবাস করে। শুধুমাত্র দেশের রাজধানী টোকিওতে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ বসবাস করে। জাপানের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হোনশু নামক দ্বীপটিতে বসবাস করে। জাপানের মানুষদের আয়ুকাল অনেকবেশী হয়ে থাকে এবং জাপানিরা খুবই পরিশ্রমী হয়ে থাকে।
জাপানের সংবিধান অনুযায়ী সেখানে সব ধর্মের মানুষ বসবাস করতে পারে। জাপানে প্রায় ৫১.৮২ শতাংশ সিন্টো, ৩৪.৯ শতাংশ বৌদ্ধ এবং ২.৩ শতাংশ খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষ বসবাস করে। জাপানের প্রধান ভাষা হলো জাপানীজ। জাপানীজ ভাষায় বিভিন্ন ধরণের অক্ষর দেখা যায়।
জাপানকে প্রযুক্তিবিদ্যার দেশও বলা হয়। কারণ জাপান প্রযুক্তিবিদ্যাতে অন্য দেশ গুলির থেকে অনেক এগিয়ে। ১৯৪৫ সালে জাপানের দুইটি শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু হামলা হয়েছিল। তখন সেখানকার মানুষের খুবই ক্ষতি হয়েছিল। তারপরেও তারা নিজেদের পরিশ্রমে এতো তাড়াতাড়ি উন্নতির ছোঁয়া পেয়েগেছে। পৃথিবীর বিখ্যাত কিছু ইলেকট্রনিক এবং গাড়ির কোম্পানি যেমন সনি, প্যানাসনিক, নিশান, টয়োটা, হোন্ডা ইত্যাদি জাপানের তৈরি করা। জাপানের তৈরি করা ইলেক্ট্রনিকে প্রচুর পরিমানে সোনা এবং রুপো ব্যবহার করা হয়। জাপানে বাবহার করা বেশিরভাগ ফোন ওয়াটার প্রুফ হয়। জাপান খুব তাড়াতাড়ি সুপার কম্পিউটার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। জাপানের ট্রেন পৃথিবী বিখ্যাত। জাপানের ট্রেন গুলি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতির ট্রেন। সেখানকার ট্রেনগুলি সময় মতো চলে সবসময়। জাপানের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন শিনকানসেন সারা পৃথিবীতে বুলেট ট্রেন হিসাবে পরিচিত। এই ট্রেন গুলি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২৪০ কিমি থেকে ৩০০ কিমি বেগে চলে। শিঞ্জুকু রেলওয়ে স্টেশন পৃথিবীর ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে প্রত্যেক দিন প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করে। এই দেশের সবচেয়ে বড়ো এয়ারপোর্ট হানেডা, এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট।
জাপানের পর্যটন শিল্পও অনেক উন্নত। প্রতি বছর অনেক পর্যটক জাপানে বেড়াতে যান। টোকিও স্কাই ট্রি পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা টাওয়ার। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরটি খুবই সুন্দর একটি শহর। সেখানকার বড়ো বড়ো বিল্ডিং গুলি, সেখানকার শিল্প নিদর্শন গুলি পর্যটকদের বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে।
জাপানে কিছু লোকপ্রিয় খাবার আছে। জাপানের মানুষ কাঁচা ঘোড়ার মাংস খায় যাকে বাসিসি বলে। ভাতের সাথে চিনি, লবন দিয়ে মেখেও খাওয়া হয় যাকে সুসি বলা হয় এবং তার সাথে কাঁচা মাছ কেটে কেটে পরিবেশন করা হয়। আমেরিকার পর সবচেয়ে বেশি ম্যাকডোনাল্ড এর রেস্টুরেন্ট জাপানে আছে। জাপানের মানুষরা সামুদ্রিক খাবার খুবই পছন্দ করেন। তারা প্রতিবছর প্রায় ১৭ মিলিয়ন টন সামুদ্রিক খাবার আমদানি করে থাকে।
জাপানের মানুষরা অনেক ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অ্যানিমেশন ডিসাইন জাপানে তৈরি হয়।
0 Comments