পর্তুগাল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য (Unknown Facts about Portugal)
আজকে আমরা ইউরোপের একটা এমন দেশ সম্পর্কে জানবো যার ইতিহাসটা অনেক পুরনো এবং বিশ্বের একটি প্রাচীন এবং শক্তিশালী দেশ হওয়ায় এক সময় সেটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পেরেছিল। এভেরিও উপদ্বীপের অন্তর্গত দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি পর্তুগাল। যা এভেরিও উপদ্বীপ এবং ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত প্রাচীন দেশগুলির একটি। এবং সেই 868 সালে মাত্র একটা কাউন্টি হিসেবে স্থাপিত পর্তুগাল 1128 খ্রিস্টাব্দে হেন্ডি্ক্সের এর নেতৃত্বে থাকা পর্তুগীজ সৈন্য রা যে যুদ্ধে জয়লাভ করে তারপরেই হেন্ডি্ক্স 1139 খ্রিস্টাব্দে প্রথম পর্তুগীজ রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এবং পরবর্তীকালে 15 এবং 16 শ শতাব্দীর দিকে পর্তুগাল বিশ্বের একটা ক্ষমতাশীল দেশ হিসেবে উঠে আসে। কিন্তু এই পর্তুগিজ পরিব্রাজকের পৃথিবীতে সমুদ্রপথের দারুণভাবে কাজে লাগানোর পদ্ধতি খুঁজে বার করে। তাই বিখ্যাত পরিব্রাজক ভাস্কোডাগামা সেই রকমই একটা জল পথের সন্ধান পান। যার মাধ্যমে ভারত এবং ব্রাজিলে আসা যায়। পর্তুগাল নামটা এসেছে রোমান্স সেল্টিক জায়গা পরতুস সেলে থেকে। যা পর্তুগালের একটি প্রাচীন শহর ও বন্দর এবং বর্তমানে জায়গাটা গ্রেটার পর্তু নামে পরিচিত। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক পর্তুগাল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য ।
পর্তুগালের মোট আয়তন 92212 বর্গ কিলোমিটার। যার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আটলান্টিক মহাসাগর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে স্পেন রয়েছে। আর আটলান্টিক মহাসাগর এর উপরে থাকা দুটি দ্বীপপুঞ্জ এসোরেস এবং মাদেরা দুটি আলাদা আলাদা শ্বশাসিত অঞ্চল এবং এই দুটি দ্বীপপুঞ্জ পর্তুগালের অন্তর্গত। এই দেশের রাজধানীর নাম লিসবন।যা পৃথিবী তথা পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন শহরের একটি। এবং লিসবন এই পর্তুগালের সব থেকে বড় শহর। তাগুস নদী পর্তুগালের মূল ভূখন্ড কে মোটামুটি ভাবে দু'ভাগে বিভক্ত করে। এই নদী স্পেনের থেকে উৎপন্ন হয় পর্তুগালে প্রবেশ করে এবং শেষ পর্যন্ত লিসবনের কাছে মোহনা তৈরি করে আটলান্টিক মহাসাগরে মিশে যায়। পর্তুগালের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট পিকো। যা এসোরেস দ্বীপপুঞ্জের পিকো নামের দ্বীপে অবস্থিত।
ইউনাইটেড নেশনস দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশের আশেপাশের সামুদ্রিক অঞ্চলগুলিতে ইউরোপ তথা পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ সেখানে নানারকম অনুসন্ধান ও সামুদ্রিক সম্পদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়, আর তার ভিত্তিতে যে সকল দেশের সীমানা বেশি তাদের মধ্যে পর্তুগাল আছে। যার বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত এলাকার সীমানা 17 লক্ষ 27 হাজার 408 বর্গকিলোমিটার।
যা আয়তনে পৃথিবীতে 11 তম। 2016 অনুযায়ী পর্তুগালের মোট জনসংখ্যা 1 কোটি 3 লাখ 9 হাজার 573 জন। যাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষজন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত এবং দেশের নাগরিকদের পর্তুগীজ বলে। পর্তুগালের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পর্তুগীজ নামক এথনিক গোষ্ঠীর যাদের মধ্যে একটা ভাষার প্রচলন বেশি পর্তুগীজ। যা পর্তুগালের আধিকারিক ভাষা এবং স্থানীয় আরো একটি সর্বস্বীকৃত ভাষা মিরান্ডিস, যে ভাষার নিদর্শন পর্তুগালের উত্তর-পূর্ব ভাগে বেশি।
মানব উন্নয়নের রিপোর্ট অনুযায়ী পর্তুগালের মানুষদের সম্ভাব্য আয়ুকাল 81 বছর। যেখানে দেশের পুরুষের তুলনায় মহিলাদের আয়ুকাল বেশি।
আর ইউরোপ তথা বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য পর্তুগালের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিখ্যাত।
পর্তুগাল একটা পুরনো সভ্যতা বিশিষ্ট দেশ। তাই সেখানে বহু প্রাচীন টাওয়ার বা বিল্ডিং থাকাটা স্বাভাবিক। তাই আজ পর্তুগালে প্রচুর জায়গা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে গণ্য হয়েছে। তাই পর্তুগালের লিসবন, পর্তো এবং মাদেরা জনপ্রিয় পর্যটক স্থান। এইসব জায়গাগুলোতে প্রত্যেক বছর বহু পর্যটক বেড়াতে আসে। তাই পর্যটন শিল্প পর্তুগালের অর্থনীতির একটা অংশ। পর্তুগালের জাতীয় মুদ্রা ইউরো। আর দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক টি ব্যাংকো ডে পর্তুগাল।
এই দেশটির আয়ের প্রধান উৎস কিছু প্রধান খনিজ সম্পদ যেমন কপার এবং ইউরেনিয়াম, কাগজ শিল্পের উপযোগী কিছু রপ্তানি, কিছু গাড়ি নির্মাণ শিল্প এবং চাষাবাদ এবং অ্যালকোহল রপ্তানির উপর নির্ভর। পর্তুগাল বিশ্বের সবথেকে বেশি পরিমাণ অ্যালকোহল রপ্তানিকারী দেশ গুলির মধ্যে পড়ে।
পর্তুগালের প্রধান বিমান পরিবহন সংস্থা টি এ পি এয়ার পর্তুগাল। এর সদর দপ্তর লিসবনে অবস্থিত। বিশ্বের সব থেকে বড় সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট গুলির মধ্যে পর্তুগালের প্ল্যান্ট গুলি আছে। এছাড়া দেশের ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই এর মূল উৎস হিসেবে কিছু পাওয়ার প্লান্ট দেশের সবথেকে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
পর্তুগালের 99% মানুষ শিক্ষিত। তাই পৃথিবীর কিছু বিশেষ প্রকার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কেন্দ্র পর্তুগালে রয়েছে।
পর্তুগালের চিত্র শিল্প এবং সাহিত্য প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্ব প্রসিদ্ধ। আর তার প্রমাণ বিভিন্ন দেশে এখনও দেখা যায়। কারণ পর্তুগিজরা একটা সময় পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল।
আর তাছাড়া তাদের সংস্কৃতির মধ্যে তাদের খাবার ও খুবই জনপ্রিয়। সেখানে মাছের বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পাওয়া যায়। এর পিছনের কারণটা হলো পর্তুগাল আটলান্টিক মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশ তাই পর্তুগালে মাছের তৈরি খাবার এতো জনপ্রিয়।
বর্তমানে পর্তুগিজ মানুষদের সংখ্যা পর্তুগালের পর সব থেকে বেশি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দেখতে পাওয়া যায়। ইউরোপীয় দ্বিতীয় সবথেকে লম্বা ব্রিজ ভাস্কোদাগামা ব্রিজ পর্তুগালে আছে। যা দৈর্ঘ্যে 12.345 কিলোমিটার। ইউরোপের তথা অন্যান্য উপনিবেশিক শক্তির মধ্যে পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম দাসত্ব প্রথার অবসান ঘটায়।
ফুটবলের সঙ্গে পর্তুগালের সম্পর্ক অনেক পুরনো। সময় টা ছিল 1875 সাল।যখন থেকে পর্তুগালে ফুটবল খেলার আয়োজন শুরু হয় এবং তারপরেই বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব গুলোর গঠন ও শুরু হয়েছে। এইভাবে বেশ কয়েক বছর চলার পথে কয়েকটি নামি দামী খেলোয়াড় যেমন ফিগো এবং রোনাল্ডোর মতো বিশ্ব প্রসিদ্ধ খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বিশ্বের বিখ্যাত ফুটবল ক্লাবগুলোর সফলতম ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত থাকা মৌরিনহো এই পর্তুগাল থেকে এসেছে। তাই সেই 1998 সালের বিশ্বের 43 তম স্থান থেকে 2010 ফিফা ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে পর্তুগাল তাদের সর্বকালের সেরা তৃতীয় নম্বর স্থানটি পায়। সফলতার গতি টা তারা আজও বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের পারফরমেন্সের দাঁড়া। ফলে বিশ্বের প্রথম দশটি ফুটবল দলের মধ্যে পর্তুগাল থাকে। তবে পর্তুগালে প্রচলিত জনপ্রিয় খেলা গুলির মধ্যে গাড়ি রেস একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে রেলি অফ পর্তুগাল একটা বিশ্ব প্রসিদ্ধ গাড়ি প্রতিযোগিতা।
তো এই ছিলো পর্তুগাল সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য ।
0 Comments