জাপানের তৈরি কিছু অদ্ভুত আবিষ্কার যা জাপান দেশটিকে অন্য দেশ গুলির থেকে আলাদা করে রাখে (Some Amazing Discoveries made by JAPAN that Kept JAPAN Separate from Other Countries)


জাপানের তৈরি কিছু অদ্ভুত আবিষ্কার যা জাপান দেশটিকে অন্য দেশ গুলির থেকে আলাদা করে রাখে (Some Amazing Discoveries made by JAPAN that Kept JAPAN Separate from Other Countries)



আধুনিক এই যুগে মানব জীবনযাত্রাকে আরো সহজতর করে তোলার জন্য প্রযুক্তি বিদ্যা দিন দিন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সহ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রযুক্তির মাত্রা। বর্তমানে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশ ই উন্নত প্রযুক্তির জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং সেই সমস্ত উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার দেশ গুলির মধ্যে যে দেশটি সবার প্রথমে আসে তা হলো জাপান। জাপানের মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন প্রযুক্তির সাথে যুক্ত করে নিয়েছে। সমস্ত বড়ো বড়ো জিনিস থেকে শুরু করে অতীব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস গুলিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজতর করে তুলেছে। সেখানকার মানুষ ঘুমোতে যাওয়ার থেকে শুরু করে ঘুম থেকে জেগে উঠা পর্যন্ত সমস্ত কাজে প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার করে থাকে।  তো চলুন জেনে নিই এমন কিছু অদ্ভুত আবিষ্কার যা একমাত্র জাপান ছাড়া আর অন্য কোনো দেশ গুলিতে খুঁজে পাওয়া যায় না। 

১) বৃত্তাকার কী -বোর্ড : সাধারণত আমরা কম্পিউটারে যেই কী বোর্ড ব্যবহার করে থাকি সেই কী বোর্ড সারা বিশ্বেও ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু জাপান এমন একটি দেশ যেখানে  সেখানকার মানুষ এই কম্পিউটারের কী বোর্ডের পাশাপাশি ওদের নির্মিত এক বিশেষ বৃত্তাকার কী বোর্ড ব্যবহার করে থাকে। কী বোর্ডটি দেখতে অনেক বৃত্তাকার ড্রাম সেটের মতো। জাপানের ইনফরমেশন টেকনোলজির টিম এই কী বোর্ডটি তৈরি করেছে তাদের নিজেদের কাজ আরো সহজ করে তোলার জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এই কী বোর্ড দেখতে অনেকটাই কঠিন এবং আজব লাগতে পারে। কিন্তু প্রস্তুতকারক কোম্পানি দাবি করে যে এই কী বোর্ড সাধারণ কী বোর্ডের থেকে অনেক দ্রুত কাজ করে। বৃত্তাকার হওয়ায় এই কী বোর্ডকে ড্রাম সেটের মতোও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই কী বোর্ড শুধুমাত্র জাপানেই তৈরি হয় এবং শুধুমাত্র জাপানের মানুষরাই এই কী বোর্ড ব্যবহার করে বলে এই কী বোর্ডের অক্ষর গুলি জাপানি ভাষায় লেখা। সেই জন্য এই কী বোর্ড গুলি বাণিজ্যিক বাজারে পাওয়া যায় না। 

২) সাই-ফাই দরজা : সাধারণত বড়ো বড়ো শপিং মোল  বা হোটেল গুলিতে আমরা অটোমেটিক দরজা দেখতে পাই যেগুলি অটোমেটিক খুলে যায় এবং অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। আমরা সিনেমা যেসকল অটোমেটিক দরজা গুলি সেগুলি আসল নয়। সেগুলিকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স দিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু জাপানিরা সেই কাল্পনিক জিনিসটাকে বাস্তবে নিয়ে এসেছে। তারা এমন দরজা আবিষ্কার করেছে যেগুলি মানুষের শরীরের শেপে অটোমেটিক খুলে যায়। এই দরজা গুলিতে একটি বিশেষ সেন্সর থাকে যার কারণে যদি কোনো মানুষ সাই-ফাই দরজার সামনে দাঁড়ায় তাহলে তার শরীরের শেপে অটোমেটিক দরজা খুলে যাবে। এই দরজা গুলিতে এমন কিছু সিকিউরিটি ফিচারসও রয়েছে যেখানে মানুষের চেহারা দেখে দরজা খুলে। অর্থাৎ সেই  এসে যদি কোনো  ব্যক্তি দাঁড়ায় তবে দরজাটি অটোমেটিক কিছুতেই খুলবে না। এই দরজা গুলি বাইরের ধুলোবালি প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।


৩) কুকুরের চশমা : অনেকেই বাড়ি ঘরে পশু পাখি পুষতে ভালোবাসেন। যখনই কোনো প্রাণীকে পুষে থাকি তখন আমরা সেটাকে বাড়ির সদস্যের মতোই ভালোবাসি। আর এই অত্যাধিক ভালোবাসার কারণে এদের নানা সময় পোশাক জুতো ইত্যাদি পরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জাপানে কুকুরকে চশমা পড়তে দেখা যায়। কুকুরের চশমা  ট্রেন্ড আজ জাপানে এতটায় জনপ্রিয় হয়েছে যে সেখানে কুকুরের জন্য আলাদা আলাদা ডিসাইনের চশমা তৈরি করা হয়।

৪) গরম কার্পেট : সাধারণত শীতকালে আমাদের ঘরের মেজে খুব ঠান্ডা পরে। যার কারণে আমাদের চলতে ফেরতে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। কার্পেট এমন এক বস্তু যা ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে আর শীতকালে ঘরের মেজ ঠান্ডা হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই কার্পেট গুলি প্রচন্ড ভারী হয়ে থাকে যার ফলে যদি এই কার্পেট গুলিতে কোন ভাবে জল পরে যায় বা যদি ময়লা জমে যায় তবে তা পরিষ্কার করতে খুবই কষ্ট হয়। তাই জাপানিজরা এমন এক কার্পেটের আবিষ্কার করেছেন যা আমাদের সাধারণ কার্পেট গুলির থেকে একদমই আলাদা। ইটা একটা ইলেক্ট্রনিক কার্পেট। অর্থাৎ এটা ইলেকট্রিসিটির মাধ্যমে গরম হয়। যার ফলে ঠান্ডার সময় এই কার্পেট খুবই উপযোগী। ইলেকট্রিকাল হিটার থাকায় এটা গরম থাকে এবং এটাকে সর্বাধিক ১১০ ডিগ্রি পর্যন্ত গরম করা যায়। আর যখন ময়লা হয়ে যায় খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। কারণ এটা পুরোপুরি ভাবে জল নিরোধক কার্পেট। অর্থাৎ যদি ভুল বসত কোনো ভাবে জল পরে যায় সেটা এই কার্পেটকে কোনো ভাবেই ক্ষতি করতে পারবে না।

৫) জাপানিজ ভেন্ডিং মেশিন : আমাদের দেশে সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলির জন্য বাজারে যেতে হয়। নির্দিষ্ট বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু জাপানে তা করতে হয় না। কারণ জাপানের মানুষ ভেন্ডিং মেশিন নামক একপ্রকার যন্ত্র ব্যবহার করেন। এই মেশিনটি সাধারণত এটিএম মেশিনের মতো হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যেমন এটিএম মেশিন থেকে যেকোনো জায়গা থেকে টাকা তোলা যায় তেমনি জাপানে যেকোনো জায়গা থেকে ওদের প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিস এই ভেন্ডিং মেশিনের সাহায্যে পেয়ে যায়। এই মেশিন গুলি ক্রয় বিক্রয়কে আরো সহজ করে তুলেছে। সেখানে কোনো মানুষ যদি বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় কোনো কিছু নিয়ে যেতে ভুলে যায় তবে তাকে সেই জিনিসের জন্য বাজারে যেতে হয় না, রাস্তায় যেকোনো জায়গা থেকে সেই ভেন্ডিং মেশিনের সাহায্যে অনায়াসে পেতে পারে।

৬) ১৮০ ডিগ্রি ট্রেনের সিট : আমাদের দেশে যে ট্রেন গুলি দেখা যায় তাতে যে বসার সিট্ গুলি থাকে তা সামনের এবং পিছনের দিকে মুখ করে থাকে যার ফলে ট্রেনের যাত্রীদের অনেক সময় উল্টো করে  হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জাপানিরা ট্রেনের সিট্ গুলিকে এমন ভাবে তৈরি করেছে যে গুলি ১৮০ ডিগ্রিতে রোটেট করে। ফলে ট্রেন গুলি যখন চলাচল করে তখন কোনো যাত্রী যদি  উল্টো অবস্থায় থাকে তবে তাদের সুবিধা অনুযায়ী বসতে পারে।

৭) টয়লেট সিঙ্ক : বর্তমানে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা দূষণ এবং বিশ্ব উষ্ণতার ফলে জলের সমস্যা প্রায় সব দেশেই দেখা যায়। বিশেষ করে গরম কালে আমাদের জল অনেক বেশি পরিমানে প্রয়োজন হয়। কিন্তু জলের সমস্যার কারণে আমাদের বিভিন্ন সময় সমস্যায় পড়তে হয়। আর যারা উন্নত মানের টয়লেট ব্যবহার করে তাদের টয়লেটে একটি ফ্ল্যাশ ট্যাংকও যুক্ত থাকে। যেখানে সাধারণত ৮ থেকে ১০ লিটার জল সঞ্চয় থাকে। প্রত্যেকবার আমরা যখন ফ্ল্যাশ ব্যবহার করি তখন অনেক জলের অপচয় হয়। সেই জন্য জাপানিরা টয়লেট সিঙ্ক পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করে। যার ফলে একবার ব্যবহৃত জল পুনরায় রিসাইক্লিন করে সেই জল ফ্ল্যাশ এ জমা করা হয় এবং তা ফ্ল্যাশ এ ব্যবহার করা হয়। সেখানে রান্না ঘরের বেসিনের পাইপ একেবারে টয়লেটের ফ্লাশের সাথে যুক্ত থাকে। তো সব অব্যবহৃত জল সব টয়লেটের যার ফলে খুব বেশি জল অপচয় হয় না।

৮) জল ছাড়া ওয়াশিং মেশিন : সাধারণত আমরা যে ওয়াশিং মেশিন গুলি ব্যবহার করি তাতে প্রথমে আমাদের জল দিয়ে তারপর কাপড় পরিষ্কার করতে হয়। যার ফলে অনেক জলের প্রয়োজন হয়। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জাপানিরা এমন একটি ওয়াশিং মেশিন আবিষ্কার করে যেটি জল ছাড়া কাপড় পরিষ্কার করতে সক্ষম। সাধারণত এই ওয়াশিং মেশিনটিতে একপ্রকার রাসায়নিক দ্রব্য থাকে। এই রাসায়নিক দ্রব্যের সাহায্যে জল ছাড়াই কাপড় পরিষ্কার করা হয়। এই রাসায়নিক দ্রব্য খুব সহজেই কাপড়ে থাকা ময়লা এবং জীবাণু গুলোকে জল ছাড়াই পরিষ্কার করে দেয়। আমরা যেমন নির্দিষ্ট কিছু জামা কাপড়কে ড্ৰাই ওয়াশ করি তেমনি জাপানিরা তাদের জামা কাপড়কে এই জল ছাড়া ওয়াশিং মেশিনের সাহায্যে পরিষ্কার করে।

৯) প্যাকেটিং সেদ্দ ডিম : ডিম্ খেতে কম বেশি সবাই ভালোবাসে। আমাদের দেশে সাধারণত ডিম্ রান্না করে খাওয়া হয়। কিন্তু জাপানে ডিমকে সেদ্দ করে তা প্যাকেট করে বিক্রি করা হয়।

এই ছিল জাপানের কিছু অদ্ভুত আবিষ্কার যা একমাত্র জাপানেই দেখতে পাওয়া যায়। 

Post a Comment

0 Comments