অ্যান্ডোরা ইউরোপের ছোট্ট সুন্দর দেশ সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক। unknown facts about Little beautiful country Andorra

অ্যান্ডোরার সরকারী নাম “প্রিন্সিপালিটি অফ অ্যান্ডোরা”। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। দেশটি পূর্ব পিরিনীয় পর্বতমালায় ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝখানে অবস্থিত। দেশটির উত্তরে ফ্রান্স এবং দক্ষিনে স্পেনের সীমানা অবস্থিত।


অ্যান্ডোরা একটি রুক্ষ এলাকা; গভীর গিরিখাত, সরু উপত্যকা ও সুউচ্চ পর্বত এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। ১৯৫০-এর দশকে এসে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। বর্তমানে পর্যটন খাত দেশটির আয়ের মূল উৎস। ক্ষুদ্র হলেও অ্যান্ডোরাতে পিরিনীয় পর্বতমালার সেরা স্কি ও স্নোবোর্ডিঙের ব্যবস্থা আছে। হাইকিং, বাইকিং ও আল্পস পর্বতমালার অসাধারণ দৃশ্যাবলী গরমকালে পর্যটকদের ডেকে আনে।


তাহলে বন্ধুরা চলুন, অ্যান্ডোরা দেশ সম্পর্কে আরো কিছু অজানা  তথ্য জেনে নেওয়া যাক।






১। প্রায় ৭০০ বছর ধরে ফ্রান্সের নেতা ও উত্তর-পশ্চিম স্পেনের উর্গেল অঞ্চলের বিশপ একত্রে শাসন করতেন অ্যান্ডোরা। তাদেরকে একত্রে ‘অ্যান্ডোরার যুবরাজগণ’ হিসাবে উল্লেখ করা হত। তবে ১৯৩৩ সালে অ্যান্ডোরাবাসী স্বাধীন গণতান্ত্রিক এলাকা হিসাবে তাদের প্রথম সংবিধান পাশ করে। বর্তমানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও উর্গেলের বিশপ দেশটির নামমাত্র শাসক। তবে বর্তমানে দেশটির অবিভাবক মোট তিনটি। অর্থাৎ দেশটির নিরাপত্তার জন্য তিনটি দেশের সৈন্য নিয়োজিত থাকে। ফ্রান্স ও স্পেন দুই দেশ মিলে ১৮১ বর্গমাইল এলাকায় নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এছাড়া মার্কিন ন্যাটো বাহিনীও মাঝে মাঝে নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করে থাকে।




২। ৪৬৭.৬৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭৭ হাজার। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৬তম ক্ষুদ্রতম দেশ।




৩। অ্যান্ডোরার সরকারি ভাষা কাতালান ভাষা। তবে কাতালান অ্যান্ডোরার সরকারি ভাষা হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে স্পেনীয় ভাষাই বহুল প্রচলিত। এছাড়া পর্তুগিজ ও ফরাসি ভাষাতেও লোকেরা কথা বলে।




৪। দেশটির প্রধান ধর্ম হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৯ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। বাকিদের মধ্যে বেশিরভাগই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। কিছুসংখ্যক হিন্দু এবং ইহুদী ধর্মের মানুষও রয়েছে এখানে।




৫। আন্ডোরা লা ভেলা অ্যান্ডোরার রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। শহরটি পশ্চিম কেন্দ্রীয় অ্যান্ডোরায় ভালিরা নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটিতে প্রায় ২৩ হাজার মানুষের বসবাস এবং নগর অঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বাস।

১,০২৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শহরটি ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু রাজধানী শহর এবং জনপ্রিয় স্কি রিসর্ট। শহরটিতে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসেন। একইসাথে শহরটি দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যেখানে একটি সরকারী প্রদর্শনী হল অবস্থিত, যা একইসাথে দেশটির প্রধান থিয়েটার এবং জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়।




৬। দেশটিতে উচ্চতা অনুসারে আলপাইন, মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে শীতকালে প্রচুর বরফ পড়ে যার ফলে অনেক সময়ই পাহাড়ি রাস্তাগুলি বন্ধ হয়ে যায়, বিশেষত ফ্রান্সের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী রাস্তাটি। গ্রীষ্মে এর আবহাওয়া শীতল, শুষ্ক ও রোদেলা থাকে।





৭। দেশটির রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের কাঠামোয় পরিচালিত হয়। সরকার প্রধান দেশটির প্রধান নির্বাহী এবং বহুদলীয় ব্যবস্থার নেতা। সরকার ও আইনসভা উভয়ের হাতে আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত। নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে বিচার বিভাগ স্বাধীন।




৮। সমুদ্রসমতল থেকে দেশটির গড় উচ্চতা ১৯৯৬ মিটার। এর সর্বোচ্চ বিন্দু কোমা পেদ্রোসার উচ্চতা ২৯৪৬ মিটার।



৯। অ্যান্ডোরার নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী নেই। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি ছোট কিন্তু শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী রয়েছে।




১০। অ্যান্ডোরায় কোনো বিমানবন্দরও নেই৷ তবে তিনটি বেসরকারি হেলিপোর্ট বা হেলিকপ্টার অবতরণের বন্দর রয়েছে, আর আছে একটি হাসপাতালের হেলিপ্যাড৷ এই দেশের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দরটির অবস্থান স্পেনে৷




১১। দেশটিতে শিক্ষার হার ১০০ শতাংশ। দেশটির আইন অনুসারে ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সের শিশুদের পূর্ণকালীন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা সরকার বিনামূল্যে প্রদান করে। ইউনিভার্সিটি ডি আন্ডোরা হল স্টেট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যান্ডোরার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।




১২। বিংশ শতাব্দী অবধি, আন্ডোরার বহির্বিশ্বের সাথে খুব সীমিত পরিবহন সংযোগ ছিল এবং এর জন্য দেশটির উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছিলো। এমনকি এখন পর্যন্ত, দেশটির সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট ৩ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। দেশটিতে মোট ২৭৯ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। দেশটিতে একটি ছোট রেইলব্যবস্থাও আছে।




১৩। অ্যান্ডোরা শীতকালীন খেলাধুলার জন্য বিখ্যাত। দেশটির জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুটবল, রাগবি ইউনিয়ন, বাস্কেটবল এবং রোলার হকি।





১৪। যেমনটি আগেই বলেছি, পর্যটন অ্যান্ডোরার আয়ের মূল উৎস, তবে কিছু কিছু অ্যান্ডোরান আদিকালের মত এখনও ভেড়া ও গবাদি পশু পালন করেন। আর আবাদযোগ্য জমিগুলোতে মূলত তামাকের চাষ হয়। দেশটিতে পর্যটকদের জন্য করমুক্ত কেনাকাটার সুবিধা রয়েছে। শুধুমাত্র কেনাকাটা করার জন্য বহু পর্যটক ফ্রান্স এবং স্পেন থেকে এখানে আসেন।




১৫। অ্যান্ডোরার সরকারী মুদ্রা ইউরো। ১ ইউরো সমান প্রায় বাংলাদেশী ৯৫ টাকা এবং ৮০ ভারতীয় রুপী।




১৬। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $৩.২৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৪২ হাজার মার্কিন ডলার।




Post a Comment

0 Comments