স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য (Unknown Facts about Statue Of Unity)

স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য (Unknown Facts about Statue Of Unity)


স্বাধীনতার আগে ভারতবর্ষের 562 রাজ্যকে একত্রিত করে রিপাবলিক অফ ইন্ডিয়া তৈরি করেছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের কথা আমরা সকলেই জানি। তাই আজ আমরা তার সম্পর্কে নয়, জেনে নেব তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি করা বিশ্বের উচ্চতম ঐক্যের প্রতীক রূপে স্তম্ভ অর্থাৎ স্ট্যাচু অফ ইউনিটের বিষয়ে। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের 143 তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতেই এই সুবিশাল মূর্তি টি উদ্বোধন করেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তো চলুন জেনে নিই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।

গুজরাটে নর্মদা নদীর উপর তৈরি সাধুবেট নামক দ্বীপের উপর এই সুবিশাল মূর্তি স্ট্যাচু অফ ইউনিটি নির্মাণ করা হয়েছে।

স্ট্যাচু অফ ইউনিটির উচ্চতা প্রায় 182 মিটার বা 600 ফুট। চীনের স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধা মূর্টি চেয়েও 23 মিটার উঁচু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত স্ট্যাচু অফ লিবার্টির থেকেও উঁচু এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি। এই মূর্তি টি প্রায় 20000 বর্গ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই মূর্তি টির নির্মাণের ঘোষণা করা হয় 2010 সালে, যখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তারপর মূর্তি টির নির্মাণের কাজ শুরু হয় 2013 সালে অক্টোবর মাসে এবং মূর্তি নির্মাণের কাজ শেষ হয় 2018 সালে।

2018 সালে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের 143 তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বের সব থেকে উঁচু মূর্তি র উদ্বোধন করেন। সর্দারের এই মূর্তি র পাশে পর্যটকদের জন্য শ্রেষ্ঠ ভারত ভ্রমণ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে 50 টির বেশি ঘর রয়েছে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে উন্নত যোগাযোগের ব্যবস্থা এবং উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা।

2014 সালে নরেন্দ্র মোদী ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই বছর ই তিনি l&t কোম্পানি কে এই মূর্তি নির্মাণের দায়িত্ব দেন। এই মূর্তি টি তৈরিতে খরচ হয়েছে 2989 কোটি টাকা অর্থাৎ তিন হাজার কোটি টাকার মতো।

যেহেতু সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলকে ভারতের লৌহ পুরুষ বলা হয় তাই তার এই মূর্তি তৈরির জন্য সরকার ভারতবর্ষের প্রতিটি জায়গা থেকে লোহা, মাটি এবং জল সংগ্রহ করে। এই লোহা ই হলো সরদারের বিশাল আকার মূর্তিটির মূলভিত্তি। এছাড়াও মূর্তি তৈরীর জন্য 70 হাজার মেট্রিকটন সিমেন্ট, 18500 মেট্রিকটন স্টিলের ব্যবহার করা হয় এবং মূর্তিটির বাইরের আবরণ তৈরি করতে 1800 মেট্রিকটন ব্রোঞ্জের ব্যবহার করা হয়।

প্রায় তিন হাজার কর্মী সাড়ে তিন বছর ধরে মূর্তি নির্মাণ করেছেন। যার মধ্যে l&t এর 300 ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন এবং 200 জন চিনা শ্রমিকসহ প্রায় 4000 জন শ্রমিক কাজ করে।

এই সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মূর্তি তে ধুতি, কোর্তা এবং চাদর পড়ে থাকা সেই পরিচিত রূপ ফুটে ওঠে।
এই মূর্তি টি এতটাই উঁচু যে সর্দার প্যাটেলের মাথাটাই প্রায় 6/7 টি ফ্লোরের সমান এবং কোটের বোতাম গুলির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই মিটার। এই মূর্তি র সবথেকে ইন্টারেস্টিং জিনিস হলো মূর্তির পাদদেশে থেকে প্রায় 50 জনেরও বেশি মানুষ নিয়ে যাওয়ার মতো দুটি হাইস্পিড লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে, যার গতি বেগ প্রায় চার মিটার পার সেকেন্ড অর্থাৎ মাত্র 40 সেকেন্ডে লিফট 150 মিটার উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। এই 150 মিটার উচ্চতায় সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের বুকের বা দিকে একটি খোলা গ্যালারি রয়েছে। সেখান থেকে একসাথে 200 জন মানুষ ভ্যালি, ব্রিজ এবং পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।

এছাড়াও এই মূর্তি টির ভিতরে একটি অনন্য মিউজিয়াম এবং রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। সেখানে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের বই সহ নানান জিনিসপত্র রাখা থাকবে। তার সাথে রয়েছে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জীবনী দেখার এক অনন্য ব্যবস্থা। এই মূর্তি র বাইরে দিকে লাগানো রয়েছে আধুনিক আলোকসজ্জা এবং মূর্তি টির 5 কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা।

রিখটার স্কেলে প্রায় 6.5 পর্যন্ত ভূমিকম্প রোধ করতে পারে এই মূর্তি। এবং বিভিন্ন রকমের দূষণ এড়াতে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিবছর নানান দেশ থেকে পর্যটক আসে এই মূর্তির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। তো আপনি যদি এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে আপনিও যেতে পারেন।

তো এই ছিলো ভারতের আয়রন ম্যান বা লৌহমানব এর সুবিশাল মূর্তি স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সম্পর্কে কিছু তথ্য।

Post a Comment

0 Comments